তারুণ্যের কন্ঠস্বর

ধর্ষকের পরিচয় প্রকাশ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: একটি সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের প্রেক্ষাপটে প্রায়ই দেখা যায়, ভুক্তভোগীর ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা তাদের জন্য মানসিক ও সামাজিকভাবে আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এই প্রবণতা শুধু ভুক্তভোগীকে দ্বিতীয়বার আঘাত করে না, বরং অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় এবং সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। এর পরিবর্তে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো উচিত। ধর্ষকের পরিচয়, তাদের ছবি এবং অপরাধের বিবরণ প্রকাশ করা উচিত, যাতে সমাজে সচেতনতা বাড়ে এবং অপরাধীদের প্রতি কঠোর বার্তা পৌঁছায়। সেই সঙ্গে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এই অপরাধের প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

*ভুক্তভোগী নয়, অপরাধীকে লক্ষ্য করা উচিত:
ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিচয় বা ছবি প্রকাশ শুধু তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে না, বরং তাদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি করে। এই প্রক্রিয়া ভুক্তভোগীকে দোষারোপের সংস্কৃতির মুখোমুখি করে, যেখানে তারা নিজেদের দোষী মনে করে এবং সমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর বিপরীতে, ধর্ষকের পরিচয় প্রকাশ করা সমাজে তাদের অপরাধের গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করবে। এটি অপরাধীদের সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ করবে এবং অন্যদের মধ্যে এই ধরনের অপরাধ করার প্রবৃত্তি হ্রাস করবে।

ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রে বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অপরাধী পার পেয়ে যায়। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য দ্রুত বিচার ব্যবস্থা, সঠিক তদন্ত এবং কঠোর শাস্তির বাস্তবায়ন জরুরি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সমাজে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে এই ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে অপরাধীদের পরিচয় প্রকাশে। তবে, এটি করতে হবে নৈতিক ও আইনি সীমার মধ্যে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মিডিয়ার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে, যেখানে অপরাধীর পরিচয় সঠিকভাবে প্রকাশ পাবে, কিন্তু ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষা পাবে। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে, যা মানুষকে এই অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করবে।

এই সমস্যা সমাধানে শুধু আইনি ব্যবস্থা নয়, সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনও প্রয়োজন। ধর্ষণের মতো অপরাধকে কেবল একটি ঘটনা হিসেবে নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক কাঠামোর উপর আঘাত হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষা, সচেতনতা এবং নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে সম্মান ও সমতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ভুক্তভোগীকে লজ্জা বা দোষারোপের পরিবর্তে সমর্থন দেওয়া উচিত, এবং ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি ও সামাজিকভাবে প্রকাশ করা উচিত। এটি কেবল অপরাধীদের দমন করবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

-সুচিস্মিতা চক্রবর্তী