অপেক্ষার অবসান হলো অবশেষে। ১৮ বছরের অধ্যবসায়ের পর বিরাট কোহলির হাতে উঠল আইপিএলের শিরোপা। চতুর্থবারের মতো ফাইনালে খেলতে নেমে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পেলেন তিনি। ফাইনালের শেষ বলে জশ হ্যাজলউড যখন ডেলিভারি করলেন, তখন কোহলির চোখে ছিল অশ্রুর ছায়া। অনুভূতির ভাষা যেন চোখেই প্রকাশ পেল।
বেঙ্গালুরুর জন্য এই জয় এসেছে ৬ রানের ব্যবধানে, কিন্তু ম্যাচের ধরণ বলছে, জয়টা আরও আগে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে ব্যাট করে দলটি ৯ উইকেটে তুলেছিল ১৯০ রান—যা আহমেদাবাদের এবারের আইপিএলে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম রান হয়েও কার্যকর হয়ে ওঠে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাঞ্জাব কিংস সংগ্রহ করতে পারে ৭ উইকেটে ১৮৪ রান।
পাঞ্জাবের ইনিংসের গতি থেমে যায় মূলত ফাইনালের চাপে ও বেঙ্গালুরুর স্পিন আক্রমণে। ক্রুনাল পান্ডিয়া ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নিয়ে মাঝখানে গতি থামিয়ে দেন। পাঞ্জাবের ব্যাটারদের মধ্যে প্রভসিমরান সিং (২২ বলে ২৬) ও প্রিয়াংশ আর্য (১৯ বলে ২৪) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সবচেয়ে মন্থর ইনিংসটি আসে নেহাল ওয়াধেরার ব্যাট থেকে—১৮ বলে ১৫ রান করে দলকে চাপে ফেলেন তিনি।
পাঞ্জাবের পক্ষে আলো ছড়িয়েছেন কেবল জশ ইংলিস। তাঁর ২৩ বলে ৩৯ রানের ইনিংসেই কিছুটা আশার আলো জ্বলে। কিন্তু ৯৩ রান দরকার ছিল ৪৭ বলে, এবং বিপক্ষে ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার ও হ্যাজলউডের মতো অভিজ্ঞ বোলার। শেষ পর্যন্ত কাজের কাজটি আর হয়নি।
বেঙ্গালুরু ইনিংসেও খুব একটা ঝড়ো সূচনা ছিল না। টস হেরে ব্যাট করতে নামা দলটি শুরুতে চাপে পড়ে। কোহলি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেও তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৩। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তবে দলের বাকি ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রানটা ১৯০ পর্যন্ত গড়ায়। রজত পতিদার, লিয়াম লিভিংস্টোন, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও জিতেশ শর্মা—প্রত্যেকে ২০ রানের বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ইনিংসটি খেলেছেন জিতেশ শর্মা—মাত্র ১০ বলে ২৪ রান করে দলের রান তোলায় গতি আনেন। সেসময় মনে হচ্ছিল বেঙ্গালুরু ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। তবে শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসার অর্শদীপ সিং মাত্র ৩ রান দিয়ে সেই সম্ভাবনা থামিয়ে দেন। তিনি এবং কাইল জেমিসন দুজনেই ৩টি করে উইকেট নেন, যদিও দুজনেরই ইকোনমি ছিল তুলনামূলক বেশি—অর্শদীপ ৪০ ও জেমিসন ৪৮ রান খরচ করেন।
এই ম্যাচের শেষে শুধুই একটি দলের জয় হয়নি, জয় হয়েছে অধ্যবসায়, একনিষ্ঠতা আর স্বপ্নকে ধরে রাখার। বিরাট কোহলির মতো কিংবদন্তির হাত ধরে বেঙ্গালুরুও অবশেষে পেল স্বপ্নের শিরোপা।
– অংকিতা রায় চৌধুরী





