ইতিহাস গড়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলো পিএসজি, ফাইনালে ইন্টারকে ৫-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত
অবশেষে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলো। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে ফরাসি এই জায়ান্ট। শনিবার (৩১ মে) জার্মানির মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ইউরোপসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করে লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
পিএসজির ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় রাত। ৫৫ বছরের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট উঠল তাদের শিরে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে তারা গড়েছে ‘ট্রেবল’ জয়ের দুর্লভ কীর্তি—একই মৌসুমে লিগ শিরোপা, ঘরোয়া কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। এর ফলে তারা ইউরোপের নবম ক্লাব হিসেবে এই গৌরব অর্জন করল। কোচ লুইস এনরিকও রচনা করলেন নতুন ইতিহাস; ২০১৫ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে যেভাবে ট্রেবল জিতেছিলেন, এবার পিএসজির কোচ হিসেবেও সেই অনন্য অর্জন তার নামের পাশে যুক্ত হলো।
ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলে পিএসজি। বল দখল, পাসিংয়ের ধারাবাহিকতা এবং একের পর এক আক্রমণে চাপে রাখে ইন্টারকে। পুরো ম্যাচজুড়ে পিএসজি ২৩টি শট নেয়, যার মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ইন্টার মাত্র ২টি শট রাখতে পারে পোস্টের দিকে, যা তাদের হতশ্রী পারফরম্যান্সেরই প্রতিফলন।
১২তম মিনিটেই পিএসজি এগিয়ে যায় ইন্টারের সাবেক খেলোয়াড় আশরাফ হাকিমির গোলে। ভিতিনিয়ার নিখুঁত থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে তরুণ ফরসি মিডফিল্ডার ডিজায়ের দুয়ে অ্যাসিস্ট করেন হাকিমিকে, যিনি নির্ভরযোগ্যভাবে বল জালে পাঠান।
এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় প্যারিসিয়ানরা। ১৯ বছর বয়সী বিস্ময়বালক ডিজায়ের দুয়ে নিজেই দ্বিতীয় গোলটি করেন। উসমান ডেম্বেলের পাস থেকে নেওয়া তার শট ইন্টারের ডিফেন্ডার ডিমার্কোর গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়ায়। এই গোলের মাধ্যমে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল ও অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
দ্বিতীয়ার্ধেও পিএসজির গতি থেমে থাকেনি। ৬৩তম মিনিটে খিচা কাভারাত্সখেলিয়া দূরপাল্লার একটি জোরালো শটে করেন তৃতীয় গোল। ৭৪ মিনিটে মায়ুলু চতুর্থ গোলটি করেন একক নৈপুণ্যে। ম্যাচের শেষ দিকে আরেকটি দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাকে আবারও অ্যাসিস্ট করেন দুয়ে, যেখান থেকে হাকিমি তার দ্বিতীয় গোলটি করে পিএসজির পক্ষে পঞ্চম গোলটি নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে, টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেও ইন্টার মিলানকে ফিরতে হলো শিরোপা বঞ্চিত হয়েই। সিমোনে ইনজাগির দল ম্যাচজুড়ে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি।
মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় রচিত হলো এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সিংহাসনে এবার নতুন নাম—প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলে, তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে গড়া এক নিখুঁত দল হিসেবে ইউরোপজয়ী হলো তারা। নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ইউরোপ—এক নতুন শুরুর বার্তা দিয়ে।
– ইমরুল কায়েস





