খেলাধুলা

“সাহস ও সাফল্যের পথচলায় বাংলাদেশের নারী জাতীয় ফুটবল দল”

বাংলাদেশের মেয়েরা শুধু ভালো খেলে না, বরং প্রতিপক্ষকে কীভাবে দাপটের সঙ্গে হারাতে হয়, সেটাও জানে।বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এক অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের মেয়েরা দাপট দেখাতে শুরু করে। বলের নিয়ন্ত্রণ, পাসিং, পজিশনিং এবং আক্রমণের ধার — সবদিক থেকেই তারা প্রতিপক্ষকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল চোখে পড়ার মতো, যেন দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলে আসছে এমন এক দল। গোলের জন্য তাড়া ছিল, কিন্তু তাড়াহুড়ো নয় — পরিকল্পিত ও গোছানো আক্রমণ থেকে একের পর এক সুযোগ তৈরি করেছে তারা। এই ম্যাচে শুধু জয় নয়, বরং মাঠে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মূল লক্ষ্য, এবং সেটাই তারা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল এখন পর্যন্ত যে সফলতাগুলো অর্জন করেছে, তা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক গর্বিত অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ২০২২ সালে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়, যেখানে বাংলাদেশ নেপালকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ অঞ্চলে একাধিকবার শিরোপা জিতেছে। যেমন, অনূর্ধ্ব-১৬ দল এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। অনেক খেলোয়াড় বিদেশি ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর একটি বড় দৃষ্টান্ত। ঘরোয়া লিগ ও স্কুল ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে এবং নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসছে। এসব সাফল্য বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে শুধু এগিয়েই নিচ্ছে না, বরং নারী ক্ষমতায়ন ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।এছাড়া বয়সভিত্তিক পর্যায়ে (U-14, U-16, U-19) বাংলাদেশ মেয়েদের দল নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করে চলেছে। যেমন, বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ দল এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ পারফর্ম করেছে এবং সাউথ এশিয়ান অঞ্চলে একাধিকবার শিরোপা জিতেছে। এই সাফল্য প্রমাণ করে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও প্রতিভাবান মেয়েরা উঠে আসছে এবং ফুটবলের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে।সাবিনা খাতুন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম।তিনি শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায়ও একজন টপ গোলস্কোরার।
সাবিনা বিদেশের লিগেও খেলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যা অন্য মেয়েদের জন্য প্রেরণার উৎস।
সম্প্রীতি বাহরাইনের মেয়েরা যেন হতবাক হয়ে শুধু বাংলাদেশের খেলাটি দেখেই গেছেন। এই জয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, বাংলাদেশ নারী দল শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নয়, জয় ছিনিয়ে আনতেও সক্ষম। এটি দেশের নারী ফুটবলের জন্য একটি বড় মাইলফলক, যা ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের পথ খুলে দেবে।ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের অবদান এখন আর শুধু ক্রীড়াঙ্গনে সীমাবদ্ধ নেই, এটি আজ জাতির গর্ব ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। বহু প্রতিকূলতা ও সীমিত সুযোগের মধ্যেও তারা যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করেছে, তা শুধু প্রশংসনীয় নয়, এক কথায় ঐতিহাসিক। নারী ফুটবল দল এক সময় যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সেখান থেকে আজ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে মেয়েদের অসীম পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম।
বাংলাদেশের মেয়েরা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণই করেনি, বরং বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় তার অন্যতম উদাহরণ, যেখানে তারা ভারত ও নেপালের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। এই অর্জন ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঐতিহ্যে এক নতুন যুগের সূচনা। শুধু বড় টুর্নামেন্ট নয়, বয়সভিত্তিক দলগুলোরও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ফুটবল উন্নয়নের ভিত আরও মজবুত হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৯ দলগুলোও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসছে।

নারী ফুটবলের এই উত্থান সমাজে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। মেয়েরা যে চাইলেই সব পারে — সেই বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারা শুধু ফুটবল মাঠেই নয়, মানুষের মনেও জায়গা করে নিয়েছে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার প্রতীক হয়ে। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা এখন ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখে, কারণ তারা দেখে তাদের মতই কারো হাতে দেশের পতাকা উড়ছে, জাতীয় সংগীত বাজছে।সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের মেয়েরা শুধু ফুটবল খেলেনি — তারা ইতিহাস গড়েছে, মানসিকতার পরিবর্তন এনেছে, এবং সমাজে নারীর অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। তারা এখন কেবল খেলোয়াড় নয়, বরং জাতির গর্ব ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথপ্রদর্শক।

-ফাতেমা বিনতে সেলিম