বিজ্ঞান রহস্য

সাবমেরিন এর আদ্যোপান্ত

বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালি সাবমেরিন হচ্ছে রাশিয়ান সাবমেরিন প্রিন্স ভ্লাদেমির। প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরের কোন লক্ষবস্তুকে ধংশ করে দেয়ার মত ক্ষমতা রয়েছে এই সাবমেরিনের। সধু তাইনয় এই সাবমেরিন একসাথে ২০ ক্ষেপনাস্ত্র ছুড়ে সাথে সাথে শত্রু পক্ষের স্থানকে ধংশ করে দিতে সক্ষম।এই প্রিন্সভ্লাদিমির এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যে এটি শত্রুপক্ষের রাডারের চোখ এরাতে অনেকটাই কার্যকরী। এর জন্য এই সাবমেরিনটি সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ৪০০ মিয়াটার গভিরে অবাদে চলতে সক্ষম।
সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ হচ্ছে পানির নিচে চলাচলে সক্ষম ও স্বাধীনভাবে বিচরণকারী নৌযান। সচরাচর সাবমেরিনে অনেক নাবিক অবস্থান করে থাকেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাবমেরিন এর ব্যবহারের ব্যাপকতা বিস্তৃতভাবে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে অনেক বৃহৎ আকারের নৌবাহিনীতে এর অনেক সংগ্রহ রয়েছে।
১৬২০ সালে কর্নেলিয়াস জ্যাকবসজুন ড্রেবেল নামীয় একজন ডাচ কর্তৃক প্রথম নৌযানবাহন হিসেবে ডুবোজাহাজ আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়।তিনি ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের অধীনে রাজকীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ইংরেজ গণিতজ্ঞ উইলিয়াম বোর্ন কর্তৃক ১৫৭৮ সালে সূচিত ধারণা ও কাঠামোকে পুঁজি করে ডুবোজাহাজ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন তিনি। তাঁর আবিস্কৃত ডুবোজাহাজটি ড্রেবেলীয় ডুবোজাহাজ নামে পরিচিত হয়ে আছে। যন্ত্রটিকে দাঁড় টেনে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হতো। এজাতীয় ডুবোজাহাজর আবিষ্কার নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ দাবী করেন যে, অন্য কোন নৌকা দ্বারা এটিকে টেনে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৬২০ থেকে ১৬২৪ সালের মধ্যে টেমস নদীতে আরও দু’টো উন্নতমানের সংস্করণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। প্রত্যেকটিই পূর্বের তুলনায় বড় ছিল।
শত্রুবাহিনীর জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ আক্রমণ মোকাবেলায় এর ভূমিকা ব্যাপক। এছাড়াও, বিমানবাহী জাহাজ বহরকে রক্ষা করা, অবরোধ দূরীকরণ, প্রচলিত স্থল আক্রমণ ও বিশেষ বাহিনীকে গুপ্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণে ডুবোজাহাজর কার্যকারিতা অপরিসীম।সাধারণভাবেও ডুবোজাহাজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তন্মধ্যে – সমুদ্র বিজ্ঞান, উদ্ধার তৎপরতা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম, পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষন সুবিধার জন্যও ডুবোজাহাজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ডুবোজাহাজকে ব্যবহারের লক্ষ্যে বিশেষায়িত কার্যক্রম হিসেবে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতাসহ সাগরতলে অবস্থিত ক্যাবল মেরামতেও সম্পৃক্ত করা হয়। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সাগরতলে নিমজ্জিত প্রত্নতত্ত্ব পরিদর্শনেও ডুবোজাহাজ ব্যবহৃত হয়।
৩য় ও সর্বশেষ সংস্করণের সাবমেরিনে ৬টি দাঁড় ছিল এবং ১৬জন যাত্রী বহনে সক্ষম ছিল। এ মডেলটি রাজা ১ম জেমসের নির্দেশনায় তৈরী করা হয়েছিল এবং কয়েক হাজার লন্ডনবাসী এটি পরিদর্শন করেছিলেন। ডুবোজাহাজ তিন ঘণ্টাব্যাপী পানিতে নিমজ্জিত থাকতে সক্ষম হয়েছিল। ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে গ্রীনিচ পর্যন্ত আসা-যাওয়ায় সক্ষমতাসহ ১২ থেকে ১৫ ফুট (৪ থেকে ৫ মিটার) পানির নিচে অবস্থান করতে সক্ষম ছিল ডুবোজাহাজ। ড্রেবেল, রাজা জেমসকে এ ডুবোজাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের জন্য অনুরোধ জানান। রাজা তাঁর অনুরোধে সম্মতি জানান। টেমসের পানির তলে ডুবোজাহাজ আরোহণের ফলে প্রথম ভ্রমণকারী রাজা হিসেবে ইতিহাসের পর্দায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।[৩] পরবর্তীতে ডুবোজাহাজকে টেমস নদীতে অনেকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু নৌবাহিনীর কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকেই পর্যাপ্ত মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়নি এটি। বলাবাহুল্য যুদ্ধক্ষেত্রেও কখনো এর প্রচলন ঘটানো হয়নি।
ব্যক্তিগতভাবে একজন ব্যক্তি বিশ্বের যে-কোন এলাকার উপকূলে অদৃশ্যমান অবস্থায় গমন করতে সক্ষম। সেজন্য সাডুবোজাহাজ ভ্রমণকালে তাকে নৌপথ আবিষ্কার কিংবা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়বে না।
ডুবোজাহাজর কৌশলগত সুবিধাদি সম্পর্কে ইংল্যান্ডের চেস্টার এলাকার বিশপ জন উইলিকন্স ১৬৪৮ সালে ম্যাথমেটিক্যাল ম্যাজিক গ্রন্থে তুলে ধরেন -নিরাপদ যানবাহন হিসেবে আকস্মিক ও অনিশ্চিত স্রোত এবং প্রবল ঝড়ের মোকাবেলা করতে হবে না। কেননা, সমুদ্র অভ্যন্তরের পাঁচ কিংবা ছয় পেস বা তের কিংবা পনের ফুট নীচ থেকে ডুবোজাহাজকে উপরে উঠানো অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়াও, জলদস্যু এবং ডাকাতদের কবল থেকে; বরফ এবং জমাট হিমকণা থেকেও আত্মরক্ষার্থে এর ভূমিকা অসাধারণ।পানির অভ্যন্তরে থাকায় ও আকস্মিকভাবে আক্রমণ করার মাধ্যমে নৌ-শত্রুদের বিরুদ্ধে এটি ব্যাপক সুবিধাদি বহন করে।
নৌ-অবরোধের প্রেক্ষাপটে ত্রাণকার্য পরিচালনায় অদৃশ্যভাবে খাদ্য কিংবা রসদ সরবরাহের মাধ্যমরূপে এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।সামবেরিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে এর সুবিধাদি অবর্ণনীয় ও ব্যাপক।
২০০২ সালে উইলিয়াম বোর্নের সূচিত ধারণা ও নকশাকে উপজীব্য করে দুইজন আরোহীর উপযোগী ডুবোজাহাজ তৈরী করা হয়। বিবিসি টেলিভিশন প্রোগ্রাম বিল্ডিং দি ইম্পসিবল শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রের জন্য মার্ক এডওয়ার্ডস এটি তৈরী করেছিলেন। পরবর্তীতে বার্কশায়ারের এটন এলাকায় অবস্থিত ডোর্নি হ্রদে এটি সফলভাবে চালনা করা হয়েছিল।
প্রথম আবিস্কৃত পানির অভ্যন্তরে চলাচলযোগ্য যানবাহন হিসেবে ডুবোজাহাজ আবিস্কৃত হবার অল্প কিছুদিন পরেই বিশেষজ্ঞরা এর সামরিক উপযোগিতা সমন্ধে অবগত হন।
উল্লেখ্য যে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে দুটি সাবমেরিন রয়েছে যাদের নাম হচ্ছে। ২০১৬ সালে এই সাবমেরিন দুটি চীন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে করেন। উক্ত সাবমেরিন দুটির নাম হচ্ছে – বা নৌ জা নবযাত্রা এবং বা নৌ জা জয়যাত্রা।
তথ্যসূত্রঃ- ইন্টারনেট

রিজওয়ান আহমেদ রিয়ান
-বিশেষ প্রতিনিধি

Leave a Reply