আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড: দ্রুত বিচারে দেশের দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত
শ্রীপুর উপজেলার ছোট্ট শিশুটি আছিয়া ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি হাসিমুখে সবার প্রিয় হয়ে উঠেছিল সে। কিন্তু ৬ মার্চ একটি পাশবিক ঘটনার শিকার হয়ে জীবনটাকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয় আছিয়া। সেই নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো মাত্র দুই মাসের মধ্যে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এত দ্রুত রায় প্রদান।
আজ শনিবার (১৭ মে) মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। আদালত প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অপর তিন আসামি—জাহেদা বেগম, সজিব শেখ ও রাতুল শেখকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
ঘটনার পেছনের নির্মম কাহিনি
আছিয়া সেদিন বেড়াতে গিয়েছিল নিজের বোনের শ্বশুরবাড়ি, শ্রীপুরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় সে। দুদিন পর মেলে তার নিথর দেহ। চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকায়, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি—১৩ মার্চ মারা যায় ছোট্ট আছিয়া।
৮ মার্চ আছিয়ার মা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ চার্জশিট জমা দেয় ১৩ এপ্রিল। ২৩ এপ্রিল চার্জ গঠন হয় এবং ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত চলে সাক্ষ্যগ্রহণ।
ঘটনার পর মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় সাধারণ মানুষ, সামাজিক সংগঠন ও আইনজীবীরা। এমনকি স্থানীয় আইনজীবীরা ঘোষণা দেন, তারা এই ধর্ষণকারীর পক্ষে আইনি সহায়তা দেবেন না।
সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মামলায় প্রসিকিউটর নিযুক্ত করে। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আসামিপক্ষকেও আইনজীবী দেওয়া হয়, যেন বিচারপক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলার রায় পেতে সাধারণত অনেক বছর লেগে যায়। এই ঘটনার মাত্র ২ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা দেশে দ্বিতীয়বারের মতো দ্রুত বিচারপ্রাপ্ত ধর্ষণ মামলার নজির গড়ল। এর আগে এমনই এক দ্রুত বিচার হয়েছিল ২০২০ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ধর্ষণ মামলায়।
– অংকিতা রায় চৌধুরী





