রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যস্ততম এলাকা সাত মসজিদ রোড। প্রতিদিন এই সড়ক ধরে চলাচল করেন হাজার হাজার মানুষ। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি উঁচু ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা। এমন একটি স্থানে হঠাৎ করে মাটির বুক চিরে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ংকর গর্ত—যাকে ভূতাত্ত্বিক ভাষায় বলা হয় “সিঙ্কহোল”।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সড়কের মাঝে হঠাৎ করেই মাটি ধসে পড়ে তৈরি হয় এই গর্তটি। মুহূর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অনেকে ধারণা করেছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। রাস্তার পাশে থাকা ভবনের বাসিন্দারা তাড়াহুড়া করে নিচে নেমে আসেন।
এই ঘটনা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। বরং এটি নগর ব্যবস্থাপনায় এক বড় ধরনের সংকেত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিঙ্কহোল হচ্ছে এমন এক প্রাকৃতিক বা আধা-প্রাকৃতিক গর্ত, যা সাধারণত মাটির নিচে ফাঁকা হয়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়। নগর এলাকায় এর পেছনে প্রধানত দায়ী কয়েকটি মানবসৃষ্ট কারণ—যেমন ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন, দীর্ঘমেয়াদী পাইপলাইনের লিকেজ, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ ও ভূমি ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থা।
যখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বা পাইপলাইন দিয়ে পানি বছরের পর বছর ধরে সরে যায়, তখন নিচের মাটি ক্ষয়ে গিয়ে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে উপরিভাগের মাটি সেই ফাঁকা স্থানটির ভার সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ করে ধসে পড়ে। তখনই তৈরি হয় এই ধরনের বিশাল গর্ত।
সাত মসজিদ রোডে সৃষ্টি হওয়া সিঙ্কহোলটি কতটা গভীর বা বিস্তৃত ছিল তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে স্থানীয়দের মাঝে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। এমন গর্ত বড় আকার ধারণ করলে তা যানবাহন, রাস্তা এমনকি পাশের ভবনের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এই ঘটনাটি দেখিয়ে দেয়, আমাদের শহরগুলো কতটা ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শুধু উপরিভাগে নয়, মাটির নিচে কী ঘটছে, সে দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। প্রয়োজন নিয়মিত ভূতাত্ত্বিক জরিপ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো তদারকি ও নাগরিক নিরাপত্তার প্রশ্নে আরও কার্যকর পদক্ষেপ।
– অংকিতা রায় চৌধুরী





