সাম্প্রতিক খবর

মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলন: বিশ্বনেতাদের সমাগম এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

রোববার (২৬ অক্টোবর ২০২৫) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জোট আসিয়ানের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ান চেয়ার আনোয়ার ইব্রাহিমের উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে এই সম্মেলন শুরু হয়, যেখানে তিনি ‘অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব’-এর প্রতিপাদ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে কুয়ালালামপুর বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
➤কে কে অংশ নিচ্ছেন?
এই সম্মেলনে আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সহ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করছেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীপাবলি উৎসবের কারণে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল পূর্ব তিমুরকে আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বাগত জানানো। ১৪ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এই দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের সদস্যপদ লাভ করেছে।
➤কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলন?
এবারের আসিয়ান সম্মেলন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো হলো:
1. মিয়ানমার সংকট: মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় আসিয়ানের ‘পাঁচ-দফা ঐকমত্য’-এর বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ।
2. দক্ষিণ চীন সাগর: এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বজায় রাখতে চীনের সঙ্গে আচরণবিধি চূড়ান্তকরণে অগ্রগতি।
3. মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা: এই প্রতিযোগিতার মধ্যে আসিয়ানের ঐক্য ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা বজায় রাখার কৌশল।
4. গাজার পরিস্থিতি: গাজার চলমান সংকট নিয়ে আসিয়ানের যৌথ অবস্থান ও বিবৃতি প্রণয়ন।
5. অর্থনৈতিক সহযোগিতা:
   – আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করা।
   – ২০২৬ সালের মধ্যে ডিজিটাল ইকোনমি ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করার লক্ষ্য।
   – আসিয়ান ট্রেড ইন গুডস এগ্রিমেন্টের দ্বিতীয় সংশোধনী স্বাক্ষর।
   – সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
6. জলবায়ু ও টেকসই উন্নয়ন:
   – ‘এশিয়া জিরো এমিশন কমিউনিটি’ গঠনের পদক্ষেপ।
   – টেকসই পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি।
   – অর্থনৈতিক সুবিধা সমাজের সব স্তরে পৌঁছানোর নীতি প্রণয়ন।
➤দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা
সম্মেলনের পাশাপাশি আসিয়ান তার গুরুত্বপূর্ণ ডায়ালগ পার্টনারদের (যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া) সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করতে বৈঠক করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হবে।
এই সম্মেলন শুধু আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আসিয়ানের কেন্দ্রীয় ভূমিকা, টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির মাধ্যমে এই অঞ্চল বিশ্ব মঞ্চে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করছে।
– সুচিস্মিতা চক্রবর্তী