সাম্প্রতিক খবর

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনা।

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী (২৫) ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সংঘটিত হয়। ভুক্তভোগী নারী জানান, ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি ধারের টাকার বিষয়ে খোঁজ নিতে এসে তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন এবং তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর তাঁকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করা হয় এবং সেই দৃশ্যের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

*ঘটনার বিবরণ:
ভুক্তভোগী নারীর ভাই জানান, তাঁদের পরিবার ফজর আলীর কাছ থেকে সুদে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ফজর আলী হুমকি দিচ্ছিলেন। ঘটনার সময় বাড়িতে নারীর মা-বাবা ছিলেন না; তাঁরা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। বাড়িতে কেবল ওই নারী ও তাঁর দুই ছোট সন্তান ছিলেন।

নারী আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনা টের পেয়ে প্রতিবেশীরা এসে ফজর আলীকে মারধর করেন। এ সময় কিছু লোক তাঁকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে এবং ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, শাহ পরান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের পূর্বের বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।

*পুলিশের বক্তব্য:
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে পরকীয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি এবং ভিডিও ধারণ ও নির্যাতনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখছি।”

* মামলা ও গ্রেপ্তার:
ধর্ষণ মামলা: গত শুক্রবার ভুক্তভোগী নারী ফজর আলীর বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
পর্নোগ্রাফি মামলা: রোববার তিনি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন, যেখানে চারজনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তার: ফজর আলীকে রোববার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা জেলা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় মোহাম্মদ আলী (সুমন), রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের রোববার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুর রব জানান, ফজর আলী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ও জুয়ার আসর পরিচালনাকারী। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন, তবে সম্প্রতি বিএনপির লোক বলে দাবি করছেন। তাঁর কোনো রাজনৈতিক পদ নেই।

নির্যাতিত নারীর বাবা তিতাস নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘটনার পর থেকে পরিবারটি আতঙ্কে রয়েছে। নারী জানান, তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। তবে তাঁর প্রবাসী স্বামী মামলা তুলে নিতে বলছেন।

একজন প্রতিবেশী জানান, ঘটনার সময় বাড়িতে শব্দ শুনে তিনি লোকজন ডেকে আনেন। তাঁরা দরজা ভাঙা অবস্থায় নারীকে উদ্ধার করেন। কিছু লোক তখন নারীকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ফজর আলীকে পেটানো হয়।

পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে এবং জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান।

-সুচিস্মিতা চক্রবর্তী