সাম্প্রতিক খবর

জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের মাহমুদুল ইসলাম।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মাহমুদুল ইসলাম পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ পাচ্ছেন। এক যুগ ধরে তিনি স্বেচ্ছায় গ্রামে গ্রামে গাছের চারা ও বই বিতরণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং শিশুদের শিক্ষাদানের মতো নানাবিধ কাজ করে চলেছেন। মাহমুদুল ইসলামের কাজের ধরনই আলাদা। তাঁর সাইকেলের সামনের ঝুড়িতে থাকে বই, আর হ্যান্ডেলে ঝোলানো ব্যাগে থাকে গাছের চারা। এভাবেই তিনি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিতরণ করেন জ্ঞান ও সবুজের বীজ। শুধু গাছ বিতরণই নয়, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, রাস্তায় মৃত প্রাণী দাফন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ এবং জলাবদ্ধতা দূর করাসহ নানা কাজে তিনি নিবেদিত। ২০১৩ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি গাছের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আশপাশে রোপণ শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই কাজের পরিধি বাড়িয়ে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে দেন সবুজের সমারোহ। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি চাকরির পরিবর্তে বেছে নেন সমাজসেবা। গড়ে তোলেন ‘সন্ধ্যা রাতের পাঠশালা’ এবং করোনাকালে ‘আকাশতলার পাঠশালা’, যেখানে শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান করেন। তাঁর বাড়িতে গড়ে উঠেছে ‘প্রকৃতির পাঠাগার’, যেখানে হাজারো বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষায় তাঁর অনন্য উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে প্রথম আলোতে তাঁর কাজ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে পুরস্কৃত করে। মাহমুদুল ইসলামের এই কাজে সবচেয়ে বড় প্রেরণা তাঁর মা মাহমুদা বেগম। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি এই পথে এগিয়ে যান। নিজের কাজের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে তিনি বাড়িতে হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন এবং মাছ চাষ করেন। সম্প্রতি ছাগল বিক্রি করে নতুন বই কিনেছেন তিনি। অনেকেই তাঁর কাজকে পাগলামি বলে মনে করেন, কেউ কেউ বাঁকা চোখেও দেখেন। কিন্তু এসব কথা উপেক্ষা করেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২৫ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে জাতীয় পরিবেশ পদক গ্রহণ করবেন তিনি। এই পদক তিনি উৎসর্গ করতে চান তাঁর মাকে, যিনি সবসময় তাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “মায়ের প্রেরণা ছাড়া এই কাজ আমি করতে পারতাম না। এই পদক মায়েরই উপহার।”

– ইমরুল কায়েস