সাম্প্রতিক খবর

হিমালয়ের বিষধর কোবরা! জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক ইঙ্গিত?

নেপালের মাউন্ট এভারেস্টের আশেপাশে সম্প্রতি এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে। দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় মাসের ব্যবধানে সেখানে মোট ১০টি বিষধর সাপের সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে ৯টি কিং কোবরা এবং একটি মনোকলড কোবরা। এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কারণ, সাধারণত এই জাতীয় বিষধর সাপ উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে: যেমন ধানক্ষেত, জলাভূমি বা ম্যানগ্রোভ বন দেখা যায়। হিমালয়ের মতো ঠান্ডা আবহাওয়ায় এদের উপস্থিতি এক নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে সাপগুলো বাড়ি ও আশপাশের চত্বর থেকে দেখতে পান। সাপ উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় এসব সাপ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে। এমনকি, স্থানীয় জঙ্গলে কিং কোবরার ডিম ও বাসাও খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জয়া থাপা মাগার, এক পৌরসভা কর্মকর্তা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সাপগুলো তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ছেড়ে নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রতি বছর গড়ে ০.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছে। এর ফলে, নিচু এলাকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রাণীরা ধীরে ধীরে উঁচু স্থানে চলে আসতে পারছে এবং সেখানে বেঁচে থাকার উপযোগী পরিবেশও পাচ্ছে। তবে কিছু উদ্ধারকর্মীর মতে, সাপগুলো হয়তো স্বাভাবিক উপায়ে নয় বরং অনিচ্ছাকৃতভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কাঠ বা খড়ের গাদার সঙ্গে নিচু এলাকা থেকে ট্রাকে করে সাপগুলো উচ্চ এলাকায় পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করেন সাপ বিশেষজ্ঞ সুবোধ আচার্য। কিং কোবরা বর্তমানে একটি বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। নেপালের ন্যাশনাল রেড ডাটা বুক এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এর রেড লিস্ট অনুযায়ী, এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাসস্থান ধ্বংস, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, এবং বিষাক্ত দংশনের কারণে এই প্রজাতি হুমকির মুখে। ২০২২ সালে দ্য ল্যানসেট এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধুমাত্র নেপালের তরাই অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ২৭০০ জন মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষধর সাপের এমন অস্বাভাবিক অবস্থান শুধু জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব ফেলছে না, এটি ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় সতর্কবার্তা। যদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রাণীরা একে একে পর্বতাঞ্চলে স্থানান্তরিত হতে থাকে, তবে তা জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করতে পারে। এই ঘটনাটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুতন্ত্রে কীভাবে পরিবর্তন আসছে, তার এক বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠছে।

– ইমরুল কায়েস