সাম্প্রতিক খবর

ঘোড়ার চলে যাওয়া: মনু মিয়ার নিঃসঙ্গতার শুরু

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নাম জানেন অনেকেই। কারণ এখানেই থাকেন মনু মিয়া—একজন গোরখোদক, যিনি প্রায় ৪৯ বছর ধরে কবর খুঁড়ে আসছেন নিঃস্বার্থভাবে। কোনো পারিশ্রমিক নেননি, কখনো প্রত্যাশাও করেননি। মানুষের মৃত্যু সংবাদ পেলেই ছুটে যেতেন, অনেক সময় রাত-দুপুরেও।এই যাত্রায় তার নীরব সঙ্গী ছিল একটি ঘোড়া। দশ বছর আগে দোকান বিক্রি করে ঘোড়াটি কিনেছিলেন তিনি, যাতে দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে পারেন। ঘোড়ার পিঠে চড়ে পৌঁছে যেতেন কবর খুঁড়তে। ঘোড়াটিকে নিয়ে ছিল তার গভীর ভালোবাসা, নির্ভরতা।

কিন্তু সেই ঘোড়াটির করুণ পরিণতি হয়েছে সম্প্রতি। গত শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হাসিমপুর এলাকায় রাস্তার পাশে একটি খাদে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় প্রাণীটির নিথর দেহ। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘোড়াটিকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।

ঘোড়াটি যে মনু মিয়ার, তা বুঝতে সময় লাগেনি স্থানীয়দের। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মানুষ ভিড় করেন এক নজর দেখতে। অনেকেই শোক প্রকাশ করেন, দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান।

এই ঘটনার সময় মনু মিয়া ছিলেন ঢাকার একটি হাসপাতালে। নানান রোগ ও বার্ধক্যের কারণে তিনি চিকিৎসাধীন, তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী। এখনো তাকে ঘোড়ার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি, কারণ তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।

জানা গেছে, মনু মিয়া তার জীবনে ১৪টি ঘোড়া ব্যবহার করেছেন কবর খোঁড়ার কাজে। প্রতিবারই নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে বা বন্ধক দিয়ে কিনেছেন এগুলো। সন্তান না থাকলেও তিনি সবসময় মানুষকে সাহায্য করাকেই জীবনের উদ্দেশ্য মনে করেছেন।

এ বিষয়ে ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাফর ইকবাল জানান, “শনিবার সকাল পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মনু মিয়ার মতো মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তিনি কেবল একজন কবর খননকারী নন—একজন নীরব সমাজসেবক, যার কাজ এবং জীবন আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তোলে।

– অংকিতা রায় চৌধুরী