পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যা রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। এটি পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব কর্তৃক অষ্টম শতাব্দীর শেষ বা নবম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার এবং এটি একসময় বৌদ্ধধর্মের এক বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র ছিল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল:
।পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের নির্মাতা হলেন পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব (৭৮১-৮২১ খ্রি.)।তিনি আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহারটি নির্মাণ করেন।
আবিষ্কার:
১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এটি আবিষ্কার করেন। : পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁর শাসনামলে (৭৮১-৮২২ খ্রি.) এটি বিশাল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র: প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটি একটি অত্যন্ত বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ থেকেও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য আসতেন।
স্থাপত্য ও নির্মাণ: এই বিহারটি এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার হিসেবে পরিচিত। এর স্থাপত্যশৈলীও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বর্তমানেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি একটি ক্রুশিফর্ম (ক্রুশাকার) বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন।
আকার: প্রায় ৮.৫ হেক্টর (২১ একর) এলাকা জুড়ে এর কমপ্লেক্সটি বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহারগুলোর মধ্যে একটি এবং এর আয়তনের সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা করা যায়।
অবকাঠামো: এর মধ্যে রয়েছে ১৭৭টি কক্ষ, অসংখ্য স্তূপ, মন্দির এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভবন। বিহারের কেন্দ্রে একটি বিশাল মন্দির রয়েছে, যার বাইরের দেয়ালে বুদ্ধ ও হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি এবং পোড়ামাটির ফলক দেখা যায়।
নামকরণ: স্থানীয় লোকজন এটিকে “গোপাল চিতার পাহাড়” বলত, যা থেকে ‘পাহাড়পুর’ নামটির উৎপত্তি হয়েছে। তবে এর আসল নাম ছিল ‘সোমপুর মহাবিহার’।
ধ্বংসাবশেষ: কালের বিবর্তনে ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে এটি একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, তবে বাংলাদেশ সরকার এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য পুনরুদ্ধারে কাজ করেছে।
বিশ্ব ঐতিহ্য: ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
– মোসা: উম্মে কুলসুম রিপা





