নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করার অধিকার সবাই রাখে। সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন হয় একটি নির্মল ও শান্ত মন। কিন্তু বর্তমানে তাই যেন এক দূরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের বাস্তবতার বাহিরে মানুষ অতিরিক্ত চিন্তার দ্বারা তৈরি করছে এক কাল্পনিক জগৎ। যাকে ওভারথিংকিংও বলা হয়। ক্ষুদ্র বা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা হয়ে দাড়িয়েছে মানুষের নিত্যদিনের ঘটনা। যা মানুষের ধরা-ছোয়াঁর বাইরে এবং কেড়ে নিচ্ছে মানসিক শান্তি। এটি মানুষের মনে অবিরাম চক্রের সৃষ্টি করছে। যা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। ওভারথিংকিং শুধু মানসিক শান্তিই নষ্ট করে না , ব্যাহত করছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও। বর্তমান যুবসমাজে তা চরম আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওভারথিংকিং এর কিছু সাধারণ লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন :
* অতিসাধারণ বিষয়গুলোকে ঘিরে বারবার চিন্তা করা।
* অতীতে করা কোনো ভুলকে নিয়ে সারাক্ষণ মগ্ন থাকা।
* বর্তমান সময়টাকে উপভোগ না করে সারাক্ষণ ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে তা নিয়ে ভাবতে থাকা।
* সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
* অন্যের কথার দ্বারা অতি সহজেই প্রভাবিত হওয়া।
* ঘুমের সমস্যা হওয়া।
* সব কাজ অতিরিক্ত নিখুঁতভাবে করার চেষ্টাও ওভারথিংকিংয়ের লক্ষণ।
* বর্তমান ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া অবাধ তথ্য, যা মানুষকে অনেক ভাবতে বাধ্য করে।
ওভারথিংকিং অনেক জটিল সমস্যা হলেও তা কাটিয়ে উঠা খুব কঠিন নয়। কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বনই ওভারথিংকিং থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
১। নিজের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিতে শিখতে হবে। যার জন্যে প্রয়োজন নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
২। অতীতে কি হয়েছে বা ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে তার চিন্তা না করে নিজের বর্তমান সময়টাকে মেনে উপভোগ করা শিখা।
৩। নিজের মস্তিষ্কে উৎপন্ন অতিরিক্ত চিন্তাগুলোকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে , এই চিন্তাগুলো কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ নাকি শুধু নিজের মধ্যে তৈরি হওয়া এক অজানা ভয় , তা যুক্তি দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা।
৪। অতিরিক্ত চিন্তাগুলোকে দূর করতে প্রয়োজন প্রতিদিন মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করা।
৫। নিজের অতিরিক্ত চিন্তাগুলোকে ফ্যামিলি বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ অনেক সময় অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়গুলো খুবই সহজ মনে হয়।
৬। তবুও এ সমস্যা থেকে বের হতে না পারলে অবশ্যই মানসিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ওভারথিংকিং কোনো মানসিক রোগ না হলেও এটি দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা ,ওসিডির- মতো মানসিক রোগের লক্ষণ। নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তির দ্বারা অবশ্যই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। অতীত, ভবিষ্যৎ বা অন্য কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত না ভেবে বর্তমানকে মেনে নিয়ে নিজের লক্ষগুলো পূরণের মাধ্যমেই জীবন সুন্দর ও সহজ। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত চিন্তার কাল্পনিক জগৎ থেকে বের হয়ে বর্তমান সময়টাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা।
– রিয়া আক্তার





