২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্ট একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, ভূমিকম্পের আগে প্রাণীরা কী ধরনের আচরণ করে। এর আগে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের ঠিক আগে মাছেরা পানিতে ছোটাছুটি করে বা সাপেরা গর্তের মধ্যে কুঁকড়ে যায়। কিন্তু ব্যাঙের আচরণ কেমন হয়?
ভূমিকম্পপ্রবণ ইতালিতে একটি লেকের পাড়ে গবেষণার জন্য ঘাঁটি গাড়েন প্রফেসর গ্রান্ট। তার এই গবেষণার ২৯ দিনের মাথায় ইটালিতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। তিনি গবেষণা শুরুর আগে বেশ কিছু কুনো ব্যাঙের গায়ে বিশেষ সংকেতযুক্ত যন্ত্র ঝুলিয়ে দেন।ভূমিকম্পটি হয়েছিল ৬ এপ্রিল (২০০৯ সালে আবরুৎসো অঞ্চলে)। এর প্রায় ছয় থেকে সাত দিন আগে থেকেই গবেষকের ব্যাঙগুলো আজব আচরণ শুরু করে। পাঁচ দিনের মাথায় নিজেদের আবাস ছাড়তে শুরু করে তারা। এরপর তিন দিনের মাথায় গবেষণাস্থল সান রুফফিনো লেকের সমস্ত কুনো ব্যাঙ চলে যায় অন্য কোনো জায়গায়। এই ঘটনার তিন দিন পরেই ঘটে সেই ভয়াবহ ভূমিকম্প। আবরুৎসো অঞ্চলের লাকিলা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় আঘাত হানা এই দুর্যোগে মারা যায় শতাধিক মানুষ।গবেষক গ্রান্ট জানালেন, ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে কুনো ব্যাঙগুলো এমন আচরণ করে না বা ঘর ছেড়ে যায় না। তাদের শরীরে নিশ্চয়ই এমন কোনো বিশেষ সেন্সর রয়েছে, যা প্রকৃতি তাকে দিয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা হিসেবে।
তিনি আরও জানান, তার গবেষণাস্থলে চিহ্নিত ব্যাঙগুলো আবার ফিরে এসেছিল। সেটা
ভূমিকম্পের আরও ছয় থেকে সাত দিন পর। আর এই কয়েকদিনের মধ্যে সেই এলাকায় আরও কয়েকটি ছোটখাট ভূমিকম্প হয়েছিল। ড. গ্রান্ট ও তার দল এখন গবেষণা চালিয়ে দেখতে চান, কুনো ব্যাঙ ঠিক কী করে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বুঝতে পারে। তাদের অনুমান, ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভস্থ পাথরের চাপের পরিবর্তন হয়, যা হয়তো কোনো বিশেষ গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। এই পরিবর্তনই কুনো ব্যাঙের বিশেষ সেন্সর দ্বারা দ্রুত ধরা পড়ে।
– তাসফিয়া আলম





