বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রেশম শিল্প। যার জন্মভূমি বলা হয় চীনকে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৩৫০০ বছর পূর্বে চীনে এই রেশমের উৎপাদন শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ধরে চীনারা নিজেদের মধ্যে বিষয়টিকে গোপন রাখলেও পরবর্তীতে তা ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে মোঘল আমলে ভারতবর্ষে প্রচুর পরিমাণে রেশম বা সিল্কের সুতা এবং তার থেকে পোশাক তৈরি হতো। সারা বিশ্বে এই সিল্কের তৈরি পোশাকের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এসময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাণিজ্য করতে আসা বণিকরা রেশম সুতা এবং পোশাক সংগ্রহ করে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে রপ্তানি করতো। রাজশাহী,মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ ছিল রেশমশিল্পের প্রধান কেন্দ্র। তাই এই শিল্প ‘রাজশাহী সিল্ক ‘এবং ‘মুর্শিদাবাদ সিল্ক’ নামেও সমৃদ্ধি লাভ করে।
রেশম হচ্ছে একধরনের প্রাকৃতিক প্রোটিন তন্তু, যা প্রধানত রেশম পোকার গুটি থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ করে বম্বিক্স মোরি (Bombyx mori) নামক তুতঁ রেশমপোকার গুটি থেকে উন্নতমানের রেশম সুতা উৎপাদিত হয়। রেশম পোকা তুতঁ গাছের পাতা খেয়ে বড় হয় এবং পরিণত অবস্থায় গুটি তৈরি করে। প্রতিটি গুটির মধ্যে প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত একটানা সুতা থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত ৪ ধরণের রেশম সুতা পাওয়া যায়। মালবেরি , এন্ডি ,মুগা এবং তসর রেশম। ২০১৩ সালের ১৩নং আইনবলে বাংলাদেশ রেশম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন – এ ৩টি পৃথক সংস্থাকে একত্রিত করে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। এটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং এর কার্যালয় রাজশাহী অবস্থিত। ২০১৭ সালে রাজশাহী সিল্ককে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বর্তমানে সিল্কের তৈরি কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করা যাচ্ছে না । যার মূল কারণ হচ্ছে সুতার সংকট। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে তুতঁ চাষ করতে না পারার ফলে চাহিদা অনুযায়ী সুতা উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে বিজ্ঞানসম্মত নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব।
– রিয়া আক্তার





