বিনোদন

‘সদরুল পাশা স্মারক সম্মাননা’ পেলেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান

বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশের নাট্যান্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত নাট্যজন মঞ্চসারথি আতাউর রহমানকে ‘সদরুল পাশা স্মারক সম্মাননা’ প্রদান করা হয়েছে। অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের ৫০ বছর উদযাপনের সূচনালগ্নে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন এ সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন ও বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সংবাদব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।

অরিন্দমের সভাপতি নাট্যজন আকবর রেজার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত।

প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব সদরুল পাশার স্মৃতিচারণা করেন তার ছোট ভাই বিশিষ্ট গীতিকবি আসিফ ইকবাল। মানপত্র পাঠ করেন অরিন্দম সদস্য কাজল সেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘জীবনটাই একটা নাটক; যার শুরু আর শেষ কোথায় আমরা জানি না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সংস্কৃতি বিকাশে নাটকের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

আর সেই নাট্য আন্দোলনে অরিন্দমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।’ 

তিনি বলেন, ‘বাঙালির বৈশিষ্ট্য, যখন সে বিদ্রোহ করে তখনই সে অসাধারণ। নাটক অত্যন্ত কঠিন, সত্যকে সে তুলে আনে। সে জন্য নাটক সময়ের থেকে এগিয়ে থাকে।

নাটক কখনো বঞ্চনা করে না।’ 

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মঞ্চসারথি আতাউর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম আমার প্রথম বাড়ি। আমি সাংঘাতিকভাবে চট্টগ্রামের কাছে ঋণী। এখানে যা শিখেছি, বাকি জীবনে তা আর কোথাও শিখিনি। এখানে এ পুরস্কারটা নিতে এসেছি, কারণ এখানে হৃদয়ের স্পর্শ আছে।

তিনি বলেন, ‘নাটক জীবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে জানে। সদরুল পাশার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, বলা চলে আত্মীয়তার বন্ধন। চট্টগ্রামে থেকে আমি মানুষ হতে পেরেছি কি না জানি না, তবে অমানুষ হইনি। আমার আত্মজীবনীতে চট্টগ্রামের অবদানের কথা থাকে সর্বাগ্রে ও সবচেয়ে বেশি।’

নতুন নাট্য নির্মাতা, অভিনেতাদের উদ্দেশে আতাউর বলেন, ‘প্রাপ্তির আশায় না করে, মনের আনন্দে কাজ করার মাঝেই প্রকৃত আনন্দ লুকায়িত।’

সদরুল পাশার ছোট ভাই গীতিকবি আসিফ ইকবাল স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ভাইয়া কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় জেসিসি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধুদের নিয়ে সেই বিএনসিসির রুমে হানা দিয়ে প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত অস্ত্র লুট করে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ছিলেন এক নম্বর সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার। যুদ্ধ পরবর্তী থিয়েটার চর্চায় প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। তিনি সময়ের আগে জন্মেছিলেন। আমি আশা করি অরিন্দম নাট্যচর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’

নাট্যজন শিশির দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস লিখতে গিয়ে চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অরিন্দমের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আমরা তরুণ প্রযোজকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করব। ইচ্ছে আছে ৫০ বছর উপলক্ষে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট নাট্যকর্মীকে নিয়ে এসে সম্মাননা জানানোর। অরিন্দমের পুরনো নাটকগুলোর পুনঃমঞ্চায়নের ব্যবস্থা করাসহ নানাবিধ পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পঞ্চকবির গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী মধুলিকা মন্ডল।

প্রসঙ্গত, সদরুল পাশা ছিলেন চট্টগ্রামের বনেদি পরিবারের সন্তান। তার পিতা মরহুম ডাক্তার বি এম ফয়জুর রহমান ছিলেন ১৯৭০ সালের গণপরিষদ সদস্য এবং ১৯৭২ সালের সংসদ সদস্য। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের এক নম্বর সেক্টরের ডেপুটি সেক্টর কমান্ডার ও হরিণা ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন। আজন্ম আওয়ামী লীগের অনুসারী এ মহান মুক্তিযোদ্ধার অসীম অবদানের কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে সুনামের সঙ্গে। সদরুল পাশার মা ছিলেন যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের নারী পুনর্বাসনের জন্য নিবেদিত সমাজকর্মী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা এবং বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সদরুল পাশা ছাড়াও অন্য ভাই-বোনরাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। বড় বোন ডাক্তার তাজিয়া ইরফান লন্ডনের প্রখ্যাত রয়াল মার্সডান ক্যান্সার হসপিটালের অনকোলজিস্ট। মেজো বোন জেসিকা ইরফান চট্টগ্রাম ল কলেজের প্রফেসর। ছোট বোন মুনতাহা ইরফান লুটন ইউনিভার্সিটির মাসকমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম থেকে ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত। ছোট ভাই আসিফ ইকবাল নন্দিত গীতিকার ও করপোরেট ব্যক্তিত্ব। সদরুল পাশার একমাত্র সন্তান আলিফ পাশা বর্তমানে গ্রামীণফোনে উচ্চপদে কর্মরত।

-দুরন্ত ডেস্ক