সাম্প্রতিক খবর

ফিরে এল করোনা: সতর্ক না হলে আবারও বিপদ!

২০২৩ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনা মহামারি সংক্রান্ত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন—শায়দ এই অতিমারির কালচক্র শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণের হার অনেকটা কমে এসেছিল, জীবনযাত্রা ফিরেছিল স্বাভাবিক ছন্দে। কিন্তু ২০২৫ সালের জুনে এসে আবারও প্রশ্ন উঠছে—করোনা কি সত্যিই বিদায় নিয়েছে?

২০২০ সালের ৮ মার্চ, বাংলাদেশে প্রথম তিনজন কোভিড–১৯ রোগী শনাক্ত হন। এরপর ১৮ মার্চ আসে প্রথম মৃত্যুর খবর। মার্চের শেষ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়, বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, অফিস, গণপরিবহন—একটি পুরো দেশ কার্যত থমকে দাঁড়ায়।দুই মাসের বেশি সময় দেশ ছিল “বন্ধ” অবস্থায়। মানুষ আতঙ্কে ছিল, হাসপাতাল ভর্তি, টেস্টের জন্য লম্বা লাইন—সবকিছুই যেন এক ভয়াবহ স্মৃতি।

২০২১ সালে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে শুরু হয়ে, পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ, প্রবীণ নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও টিকা বিতরণ শুরু হয়। সংক্রমণ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে।

২০২৩ সালের মে মাসে WHO ঘোষণা করে যে, করোনা আর বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা নয়। বাংলাদেশেও দৈনিক সংক্রমণ নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। মানুষ মাস্ক ফেলে দিল, টেস্ট করানো বন্ধ করল, গণমাধ্যমেও আর খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিল না করোনা।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফের শোনা যায় নতুন এক ধরনের নাম—JN.1, যা Omicron-এরই একটি পরিবর্তিত রূপ। এটি খুব দ্রুত ছড়ায়, যদিও মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম।

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শনাক্ত হয় XFG ও XFC নামক উপধরন—যা JN.1-এরই উপধরন। এরপরই মে ও জুনে রোগী বাড়তে শুরু করে।

বর্তমান পরিস্থিতি (জুন ২০২৫)

(সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর)

মোট আক্রান্ত: ২০,৫১,৭৮৫ জন
মোট মৃত্যু: ২৯,৪৭৭ জন
মোট সুস্থ: ২০,১৯,৩৯৮ জন
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত: ১৫ জন
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ: ১৮ জন
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু: ০ জন
পরীক্ষার সংখ্যা (২৪ ঘণ্টায়): ১৩৪টি
আক্রান্তের হার (২৪ ঘণ্টায়): প্রায় ১১%

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি বাংলাদেশে NB.1.8.1 বা “Nimbus” নামের আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এটি মূলত ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে।

করোনা এখন আর প্রথম দিনের মতো অজানা ভয় নয়, তবে একে হালকাভাবে নেওয়াও বিপজ্জনক। নতুন ধরনগুলো দ্রুত ছড়ায় এবং বার্ধক্য বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

কিছু করণীয়:

১. সাধারণ জ্বর বা সর্দিকাশি হলে অবহেলা করবেন না—পরীক্ষা করান।

২. বাড়িতে প্রবীণ বা অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে—সচেতন থাকুন।

৩.মাস্ক পরিধান করুন।বিশেষ করে হাসপাতাল, মার্কেট বা গণপরিবহনে গেলে।

৪. বুস্টার ডোজ নেওয়া হয়েছে কি না যাচাই করুন।

৫. গুজবে কান দিবেন না।শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসরণ করুন।

করোনা চলে যায়নি—শুধু কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। এখন আবারও নতুন রূপে ফিরে এসেছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে, সচেতনতার মাধ্যমে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, আমাদের দায়িত্ব শুধু নিজেদের নয়—পরিবার, সমাজ ও পুরো দেশের প্রতি।

-অংকিতা রায় চৌধুরী