‘দ্য ভিলেজ’, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে রিলিজ হওয়া ছয় অ্যাপিসোডের হরর, মিস্ট্রি-থ্রিলার সিরিজটি শামিক দাশগুপ্তের ২০১৮ সালে প্রকাশিত একই নামের গ্রাফিক নভেলের ওপর নির্মিত। সিরিজটি মুক্তির পর থেকেই বেশ আলোচনা তৈরি করেছে। সিরিজটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিয়া। এর মাধ্যমে ওটিটিতে অভিষেক করলেন এই জনপ্রিয় নায়ক।
সিরিজটিতে আরো রয়েছেন দিব্যিয়া পিলাই, আদুকালাম নরেন, জর্জ মারিয়ান, ভি. জয়প্রকাশের মতো বড় বড় তারকা।
এই সিরিজের কাহিনিসংক্ষেপ হলো- এক ডক্টর ফ্যামিলিসহ কোথাও যাওয়ার সময় ট্রাফিকের কবলে পড়ে নিরুপায় হয়ে এক পরিত্যক্ত গ্রামের ভেতর দিয়ে শর্টকাট টার্ন নেওয়ার চেষ্টা করে। গ্রামের মাঝপথে তাদের গাড়ি খারাপ হলে গাড়িতে তার স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে সাহায্য চাইতে যায়। পাশের গ্রাম থেকে তিনজনকে কোনোরকম রাজি করিয়ে সেই জায়গায় ফিরে এসে দেখে, গাড়িসহ তার বউ-বাচ্চা গায়েব! সেই চারজন মিলে তাদের খুঁজতে বের হয়ে আবিষ্কার করে কাট্টিয়াল গ্রামের ভয়ানক পরিবেশ আর অতীতের কিছু রহস্য!
সাউথ ইন্ডাস্ট্রি থেকে কোনো মুভি বা সিরিজ মুক্তি পেলে দর্শকরা আশায় বুক বাঁধেন, কারণ সাউথ তাদের কাজ দিয়ে দর্শকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলা যায়। ট্রেলার বা ফার্স্ট লুক দেখে সবাই বরাবরের মতোই ভালো কিছুর আশা করেছিল। সিরিজটি কিছু জায়গায় বেশ ভালোও করেছে। তবে কিছু বিষয়ে নিরাশও করেছে বলতে হয়।
‘দ্য ভিলেজ’
শুরুতেই যদি বলা হয়, তাহলে এটির স্ক্রিনপ্লে। কয়েক অ্যাপিসোড অতিবাহিত হওয়ার পর গল্পের ধারাবাহিকতা আর স্ক্রিনপ্লে ঠিক নেই বলেই মনে হয়েছে! প্রতি ১০ মিনিটে প্রায় দুই-তিন স্টোরিলাইন দেখানো হয় আর কোনো একটি গল্পের যথাযথ বিল্ড-আপ ছাড়াই হুট করে আরেকটি গল্পে ঢুকে পড়ে। এতে করে দর্শকদের আগ্রহ আর মনোযোগ ধরে রাখা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভালো চরিত্রায়ণ নেই বলা যায়! অন্ততপক্ষে প্রধান চরিত্রগুলোকে আরেকটু সময় নিয়ে লেখা হলে সেটি গল্প এবং দর্শকের মাঝে ভালো প্রভাব ফেলত।
ট্রেলার বা ফার্স্ট লুকের তুলনায় সিরিজের সিজিআই একটু নিম্নমানের হয়েছে।
শেষের দিকে একটি সুনামির দৃশ্য দেখানো হয়েছে, ওই দৃশ্যের সিজিআই এতটাই নিম্নমানের ছিল যে আদিপুরুষের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না।
এ ছাড়া প্রথমদিকে হরর দৃশ্যগুলো অনেক ভায়োলেন্ট আর ভয়ানক লাগলেও পরের দিকে জোর করেই দৃশ্যগুলো রাখা হয়েছে এমনটাই মনে হয়েছে। আর যখন সুপারন্যাচারাল রহস্য থেকে পর্দা সরানো হয়, তখন থ্রিলিং বা হরর-এর চেয়ে উল্টো হাসির উদ্রেক হবে দর্শকদের। মূলত এই রহস্য উদঘাটনই ছিল সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, অথচ সেই বিষয়টি এমন বাজেভাবে তুলে ধরা হয়েছে দেখে আশাহত হয়েছেন দর্শকরা।
সিরিজটির সংলাপগুলোর লেখনী অনেক বাজে, মাঝেমধ্যে এমন মনে হয়েছে যে সংলাপ লেখার ক্ষেত্রে কোনো পরিশ্রমই করা হয়নি। একই সংলাপ পুনরাবৃত্তি করা হয় অনেক সময়, যা শুনতে শুনতে একসময় বিরক্ত লাগে।
তবে এসব নেগেটিভ দিকের পরেও বেশ কিছু পজিটিভ দিক রয়েছে সিরিজটিতে, যার জন্য অবশ্যই সিরিজটি দেখতে পারেন।
প্রথমত অ্যাপিসোডগুলোর দৈর্ঘ্য খুবই কম, প্রত্যেকটা অ্যাপিসোড ৩৫-৪০ মিনিট করে। যার কারণে পুরো সিরিজ শেষ করতে বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। প্রথম তিন অ্যাপিসোডে দর্শক যে রকমটা আশা করছিলেন, তা পুরোপুরি দিতে সক্ষম হয়েছেন নির্মাতারা।
ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করতে পুরোপুরি সফল হয়েছে এবং যে সাউন্ডট্র্যাকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা শুনলে গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠার মতো অতিমাত্রায় ভায়োলেন্স দেখানো হয়েছে, যা দেখে ভালোই লাগবে হররপ্রেমীদের। এ ছাড়া সিজিআই খারাপ হলেও মেকআপের ক্ষেত্রে অনেক ভালো করেছে, জম্বি টাইপের মানুষগুলোর মেকআপ সুন্দর হয়েছে। মেকআপ দেখে ‘দ্য লাস্ট অব আস’ সিরিজের ইনফেক্টেডের কথা মনে পড়তে পারে দর্শকদের।
যদি এন্ডিংয়ের কথা বলা হয়, তাহলে বলব মোটামুটি ভালোই ছিল। তবে প্রথম সিজনেই গল্প শেষ করে দিলে ভালো হতো, দ্বিতীয় সিজনের জন্য পথ খোলা রাখার প্রয়োজন ছিল না। যারা হরর মুভি বা সিরিজ পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই সিরিজটি দেখার মতোই বলা যায়। হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন সিরিজটি।
-দুরন্ত ডেস্ক





