বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। প্রায় ৭০০ টি নদীর বহমান জল বাংলার মাটিকে উর্বর করে। বাংলাদেশের মোট জমির ৫৯% (৩৩৮২৮.৩৪ বর্গ মাইল) আবাদযোগ্য। যা ১৯৬৫ সালে ৬৭.৪ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ উর্বর জমি সমৃদ্ধ, যার মধ্যে ৬৫.৫% চাষের অধীনে এবং ১৭% বনের ভেতরে। অনেক জায়গা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৯.৪ ফুটের কম হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩.২৮ ফুট বাড়লে এই দেশের আনুমানিক ১০% অঞ্চল জুড়ে বন্যা হতে পারে। ১৯৬০ এর দশক থেকে, অনেক বাঁধের একটি ধারাবাহিক নির্মাণ করা হয়েছে যা, প্রাকৃতিকভাবে ব্যাপক পলি জমার সূচনা করেছে। এবং এই কারণে নতুন উর্বর জমি তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাংলাদেশের উর্বর জমির কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ফসল ভালো হয়। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি কাজ শুধু একটা পেশা না বরং জীবন বাঁচানোর একটা পদ্ধতি। মানুষের জন্ম হয় শূন্য হাতে। সবার প্রথমে একজন মানব সন্তানের প্রয়োজন হয় খাবার। যতই প্রযুক্তির যুক্তি দেই না কেন আহার মাটি থেকেই আসে। আর আহারের জন্য যোগ্য আবাদ্ভুমি বাংলাদেশ।
যে কোন প্রজন্মের মানুষের দিকে যদি এই ধরণের প্রশ্ন ছোড়া হয় যে, “ তুমি বড় হয়ে কি হবে? বা আপনার সন্তানকে আপনি কি বানাবেন? বা কোন পেশায় দেখতে পছন্দ করবেন? “ এই ধরণের প্রশ্নের হাজারটা উত্তর আপনি খুঁজে পাবেন। কেউ বলবে ডাক্তার, কেউ বলবে ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বলবে শিক্ষক আবার কেউই বলবে গবেষক। কিন্তু কৃষক কেউই হতে চায় না। বা কোন অভিভাবকও নিজের সন্তানকে কৃষক বানাতে চায় না। এমন কি কৃষকরাও চায় তাদের সন্তান যেন ডাক্তার হয়।
আমার প্রশ্ন কেন? কৃষি কাজকে পেশা হিসেবে নাওয়া যাবে না কেন?
যদি জীবন বাঁচানো মহৎ কাজ হয়, তাহলে কৃষি কাজ একটি মহৎ কাজ। ধরুন, একদিন আমাদের দেশের সকলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিংবা অন্য কোন পেশায় কাজ করতে থাকলো। আর এই দেশে একজনও কৃষি কাজ জানে না। তখন কি হবে? আমরা আমাদের সংগ্রহের খাবার খাবো। তারপর বিদেশ থেকে কিনে এনে খাবো। কিন্তু কতদিন? আপনার কি মনে হয় না যে দেশে যদি কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে একদিন আমাদের না খেয়ে মরতে হবে?
ঠিক আছে, এই কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিলাম।
কৃষিকাজ না করি। কিন্তু কয়জনকে পাবেন যারা কৃষি নিয়ে পরাশুনা করে বা করতে চায়। এই বিষয়ে অনেক কিছু জানার এবং শেখার আছে। সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশকে, দেশের মানুষকে বিশেষ করে কৃষকদের কতটা উন্নতি আনা সম্ভব তা কল্পনার বাইরে। ফসলের উৎপাদন, চাষপদ্ধতি, রোগবালাই নির্ণয় ও প্রতিরোধ, নতুন নতুন শস্যের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং সর্বোপরি পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষিতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের অধীন কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ অনুষদে রয়েছে ১৬টি বিভাগ। কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব, উদ্যানতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট, বায়োটেকনোলজি, পরিবেশবিজ্ঞান, সিড সায়েন্স ও টেকনোলজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। সুতরাং একটি ফসলের জন্ম থেকে ফলন ও জাত উন্নয়নে যত বিষয় জড়িত থাকতে পারে, প্রায় সবই পড়ানো হয় কৃষিসংশ্নিষ্ট বিষয়গুলোতে।
একবার শুধু কল্পনা করে দেখেন যে দেশ উর্বর মাটির জন্য পরিচিত, সেই দেশের তরুণ প্রজন্ম যদি কৃষি নিয়ে লেখা পড়া করে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে কৃষিকাজে অবদান রাখতে সক্ষম হয় তাহলে দেশটা কত উন্নত হতে পারতো।
কোন পেশাই ছোট বড় হয় না। কৃষি কাজ মহৎ কাজ। জীবন বাঁচানোর মত কাজ। শস্যই যদি না থাকে তাহলে এতো পোশাক, এতো বিলাসবহুল বস্তু, এতো ওষুধ কি কাজের? সন্তানদের স্বপ্নের তালিকায় কৃষি কাজও অন্তর্ভুক্ত থাকুক। মাটি মানুষ, মাটির দেশে, মাটিকে ভালোবাসুক।
দুরন্ত প্রতিনিধি, লামিসা সানজানা





