অবস্থান
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বাগেরহাট মসজিদ শহরের একটি অংশ। এটি বাংলার সুলতানি আমলের (১৩৫২-১৫৭৬) বাংলাদেশের বৃহত্তম মসজিদ। এটি সুন্দরবনের গভর্নর খান জাহান আলী দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটিকে “সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে একটি” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি বাগেরহাটের প্রধান শহর থেকে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার (৩ মাইল) দূরে অবস্থিত; এবং ঢাকা থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) দূরে অবস্থিত।
নামকরণ
ষাট গম্বুজ মসজিদের নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, সংস্কৃত শব্দ সাত ও ফারসি শব্দ ছাদ এর ওপর গম্বুজ থাকায় এটি ছাদ গম্বুজ থেকে ষাট গম্বুজ হয়েছে। আবার কারও মতে, মসজিদের অভ্যন্তরে ছয়টি সারিতে ১০টি করে মোট ষাটটি পাথরের খাম্বার ওপর মসজিদের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে এর নাম হয়েছে ষাট গম্বুজ। আবার মসজিদটির ছাদ সমতল নয়, এটি গম্বুজ আকৃতির। সেই থেকে মসজিদটি ছাদগম্বুজ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে কথ্যরূপে, ষাট গম্বুজ নাম হয়েছে।
মসজিদের বিবরণ
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১টি, সাত লাইনে ১১টি করে ৭৭টি এবং চার কোণায় ৪টি করে মোট ৮১টি। দক্ষিণ-পূর্ব কোণের বুরুজটির ভেতর দিয়ে ওপরে বা ছাদে ওঠার সিঁড়ি আছে। এর নাম রওশন কোঠা। আর উত্তর-পূর্ব কোণের বুরুজটি দিয়েও ওপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে যেটি আন্ধার কোঠা নামে পরিচিত। প্রবেশের প্রধান ফটকের ডান পাশে রয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। এখানে প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলকসহ খানজাহান আমলের অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। আছে খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্যবাহী ‘কালা পাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ কুমিরের মমি। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে পীর খানজাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে যে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত পাথর চট্টগ্রাম থেকে এনেছিলেন। আবার কারও মতে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। পুরো মসজিদটি তৈরির মূল উপাদান চুন, সুরকি, কালো পাথর ও ছোট ইট। এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুঘলক (তুরস্ক) স্থাপত্যশৈলীর মিল রয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
– তাসফিয়া আলম





