ইভেন্ট নিউজ

ঢাকায় প্রথমবারের মতো মেয়েদের প্রযুক্তি উৎসব “গ্লোরি গার্লস টেক ফেস্ট ১.০ “

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস আজ যেন ছিল স্বপ্ন আর উদ্ভাবনের মিলনমেলা। ভোরের আলোয় ঢাকার আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল তরুণীদের উৎসাহ, আত্মবিশ্বাস আর প্রযুক্তির জয়গান। হাতে রোবট, ল্যাপটপ, প্রজেক্ট বোর্ড আর চোখে একটিই স্বপ্ন—ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার অদম্য প্রত্যয়।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেয়েদের জন্য আয়োজিত হলো প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় উৎসব, “গ্লোরি গার্লস টেক ফেস্ট ১.০”। আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের এই উদ্যোগ ছিল সেই তরুণীদের জন্য, যারা প্রযুক্তির শুধু ব্যবহারকারী নয়, তার স্রষ্টা হতে চায়। এটি কেবল একটি ইভেন্ট নয়, একটি আন্দোলন—যেখানে মেয়েরা তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক ও নেত্রীকে জাগিয়ে তুলছে।
দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটে আসা শতাধিক তরুণী তাদের হাতে গড়া উদ্ভাবন নিয়ে দাঁড়াল প্রযুক্তির মঞ্চে। কেউ এনেছে সোলার গাড়ি, কেউ রোবট, কেউ তৈরি করেছে শিক্ষার জন্য নতুন অ্যাপ। অনেকে সমাজের সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান উপস্থাপন করেছে। প্রতিটি প্রজেক্ট যেন বলছিল, “আমরা প্রস্তুত, আমরা পারি!”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড্যানিয়েল ডব্লিউ. লুন্ড। আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, “প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে নতুন রূপ দিচ্ছে। কিন্তু এই রূপান্তর তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন এর নেতৃত্বে থাকবে নারী। আমি চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে কোডিং শিখুক, আইডিয়া সৃষ্টি করুক আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাক। এই উৎসব তাদের সেই পথ দেখাচ্ছে।”
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এম. আব্দুর রহমান নিপু বলেন, “আজ এখানে যে মেয়েরা তাদের স্বপ্ন নিয়ে এসেছে, তারা প্রমাণ করছে—প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন সময়ের দাবি। ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে কাজ করলে তবেই পৃথিবী হবে ভারসাম্যপূর্ণ।”
উপস্থিত ছিলেন চিফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম, চিফ এডুকেটর বি. এ. ওয়াহিদ নিউটন, চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার গোলাম সারোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও উৎসবের উপদেষ্টা ড. লাফিফা জামাল, প্রজেক্ট হেড সাবিকুন নাহার রিম্মি, প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেদওয়ানুর রহমানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন তাহরিন তৌহিদা (অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড), তানজিবা রহমান (চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি), ফাহমিদা আহমেদ (চেয়ারম্যান, এলিগ্যান্ট টেকনোলজি লিমিটেড) এবং মিডিয়া অতিথি জুলহাজ উদ্দিন আল জুবায়ের (সিনিয়র প্রেজেন্টার, যমুনা টেলিভিশন)।
দিনভর চলল প্রজেক্ট প্রদর্শনী, আইডিয়া পিচিং আর টেক কুইজ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন ছোট্ট মেয়েরা বলল, “আমার উদ্ভাবন সমাজ বদলে দেবে,” তখন হলের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ল গর্ব আর সম্ভাবনার আলো।
বিকেলে ঘোষণা করা হলো বিজয়ীদের নাম। “গ্লোরি ইনোভেটর”, “টেক পায়োনিয়ার”, “ইন্টেলি স্টার”—এই সম্মাননাগুলো পেয়ে তরুণীদের চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু আর মুখে গর্বের হাসি। ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট আর লাখ টাকারও বেশি মূল্যের পুরস্কার তুলে দেওয়া হলো তাদের হাতে।
উৎসবের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল উদ্দীপনা আর আশার। শিক্ষার্থীরা বলছিল, “এটা শুধু প্রতিযোগিতা নয়, আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথ।”
সন্ধ্যার আলোয় সবাই একসঙ্গে প্রতিশ্রুতি নিল—“Empowering Technology with Future”। এই তরুণীরাই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ, তারাই আগামী দিনের উদ্ভাবক।
– সুচিস্মিতা চক্রবর্তী