সিলেটের আমুড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এক অনন্য নির্মাণশৈলীর নিদর্শন—’নীড়’। এটি শুধু একটি বাড়ি নয়, বরং প্রকৃতি ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মিলনের এক অসাধারণ উদাহরণ। শতবর্ষী গাছগুলোকে অক্ষত রেখে বাড়ির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন প্রকৃতির শরীর ছুঁয়ে গিয়েও মানুষ তার মাঝে মিশে যেতে পারে। পুরো প্রকল্পটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি জিশান ফুয়াদ চৌধুরী, যিনি শুরু থেকেই প্রকৃতি সংরক্ষণের উপর জোর দিয়েছেন। বাড়ির কাঠামো উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে নিচের জীববৈচিত্র্য নিরাপদে থাকলেও বসবাসকারীরা পানির স্তর ও বন্যপ্রাণীদের থেকে সুরক্ষিত থাকেন।
এই বাড়ির প্রতিটি কক্ষ, বারান্দা ও উঠান এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন আলো, বাতাস ও ছায়ার খেলা সেখানে নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। ফাঁপা ব্লক, বাঁশের মাদুর ও স্ক্রিন জাল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক শীতলতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বসার ঘরের চারপাশে গাছ রেখে যে নান্দনিকতা তৈরি হয়েছে, তা শুধু চোখ নয়, মনকেও শান্ত করে। বাড়িটির নির্মাণকাজ হয়েছে কোভিড-১৯ এর সময়, ফলে ধীরে সুস্থে, মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি বিবরণে নিখুঁততা আনা সম্ভব হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ‘নীড়’প্রকল্প একটি বার্তা দেয়—স্থাপত্য শুধু বসবাসের জন্য নয়, বরং এটি হতে পারে পরিবেশ ও মানুষের সহাবস্থানের এক জৈব উপলব্ধি। এই প্রকল্পের স্বীকৃতিও এসেছে যথাযথভাবে—২০২২ সালে এটি বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন আর্কিটেকচারে ভূষিত হয়। যারা আধুনিক স্থাপত্যে পরিবেশ‑সচেতনতা দেখতে চান, ‘নীড়’ তাদের জন্য এক প্রেরণার নাম।
– অংকিতা রায় চৌধুরী





