গত ০৯ জুন, ” দুই চাকায় স্বপ্ন দেখি, দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি” এই স্লোগান নিয়ে ১০ জেলায় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ০৬ সাইকেল প্রেমী যুবক। যারা হলেন, মো: রাসেল, আলভি ইরাম, রিয়াসাত আজিম হৃদয়, মো: বাদশা, আব্দুল্লাহ আল ইরমান, মো: সিয়াম। রাইড পূর্ববর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী Tour_de_Khulna শিরোনামে রাইডটির রোড প্ল্যান: “১ম দিন : বরিশাল – ঝালকাঠি- পিরোজপুর – বাগেরহাট – খুলনা। ২য় দিন : খুলনা – সাতক্ষীরা – যশোর। ৩য় দিন: যশোর – ঝিনাইদহ – চুয়াডাঙ্গা – কুষ্টিয়া । ৪র্থ দিন: কুষ্টিয়া – পাবনা – রাজবাড়ি – ঢাকা – নারায়ণগঞ্জ” অনুসারে ০৯ জুন বিকাল ০৫ ঘটিকার সময় তারা ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেন এবং রাইড শেষ হয় ১২ তারিখ পাবনা সার্কিট হাউস এ। রাইডের শুরুতে তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা সদরঘাট সাইকেল চালিয়ে যান এবং সেখান থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল পর্যন্ত যান। পরবর্তীতে বরিশাল হতে তাদের জেলায় জেলায় ভ্রমণের যাত্রার সূচনা করেন।
প্রথম দিনের যাত্রায় তীব্র গরম উপেক্ষা করে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর,বাগেরহাট এবং খুলনা এই পাঁচ জেলা ভ্রমণ করে মোট ১২২ কিলোমিটার সাইক্লিং করেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দিন খুলনা থেকে শুরু করে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এই তিন জেলায় ভ্রমণ করে পাড়ি দেন আরো ১৫০ কিলোমিটার পথ এবং দ্বিতীয় দিনের যাত্রা সমাপ্ত করেন লালন শাহ এর শহর কুষ্টিয়া এসে। কুষ্টিয়া শহরে রাত যাপন শেষে তৃতীয় দিনের যাত্রা শুরু করেন তারা। তৃতীয় দিনে কুষ্টিয়া থেকে পাবনা জেলায় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আরো ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং করেন এবং এসে পৌঁছান পাবনা সার্কিট হাউসে। সড়ক পথে বরিশাল জেলা হতে পাবনা সার্কিট হাউসে সাইক্লিং করা পর্যন্ত তারা সর্ব মোট ৪০০ কিলোমিটার সাইক্লিং করেন। পরবর্তীতে তাদের ১০ জেলায় সফল ভাবে সাইকেল রাইড শেষ করে পাবনা থেকে বাসে করে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসেন।
০৬ সাইক্লিস্টের একজন মোঃ রাসেল দুরন্তের সাথে এই রাইড নিয়ে তারা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, দু’চাকায় বাংলাদেশ, ট্যুর দি খুলনা শিরোনামে এই যাত্রায় ” দুই চাকায় স্বপ্ন দেখি, দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্য নিয়ে যাত্রা করা রাইডের অন্যতম উদ্দেশ্যে ছিল, ‘সবার মাঝে দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বার্তা পৌঁছে দেয়া’
দীর্ঘ এই পথ সাইকেলে চড়ে পাড়ি দেওয়ার সময় তাদের কি কি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের সাইক্লিস্ট মোঃ রাসেল বলেন, আমাদের দীর্ঘ এ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা ছিল তীব্র রৌদ্র, প্রচণ্ড গরম। দাবদাহ থাকার কারণে এত রোদ ছিল, যা আমরা অভ্যস্ত নই। ফলে রৌদ্র ও গরমে সাইক্লিং করার সময় এনার্জি না পাওয়ায় অনেক ভুগতে হয়। এছাড়াও রাস্তার দুই ধারে ছায়া দেওয়া গাছের স্বল্পতার কারণে তেমন কোথাও ছায়া ছিল না। কোথাও কোথাও রাস্তার দুইপাশে গাছ যা ছিল খুবই ছোট ছোট যা আমাদের পর্যাপ্ত ছায়া দিতে পারে নি। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে খুলনা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত। এখন রাস্তার পাশে বড় গাছ নেই বললেই চলে, প্রচণ্ড রৌদ্রে শরীর জ্বলে যাওয়ার অবস্থা। প্রচণ্ড রোদে আমাদের কয়েকজন সাইক্লিস্ট অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং হিট স্ট্রোক এর ভয়ে কয়েকজন যশোর থেকেই নারায়ণগঞ্জ ফিরতে বাধ্য হই।
এছাড়াও রাইড নিয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মোঃ রাসেল আরো বলেন, ‘কিছু অনুভূতি না বললেই নয়, আমরা তখন ঝালকাঠি শহর পার হচ্ছিলাম, পথমধ্যে আমরা রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকানে সকালের নাস্তা খেতে বিরতি দেই। দোকান ছোট হওয়াতে বাহিরের টেবিল এ বসি আমরা। কৌতূহলবশত সেখানে একজন জিজ্ঞেস করলেন আমরা কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি। তার প্রশ্নের উত্তরে যখন বললাম, আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছি। দোকানদার একটু অবাক হলেন, ভিতর থেকে মাঝবয়সী এক ছেলে বের হয়ে আসলেন এবং আমাদের অন্যরকম ভাবে পরিবেশন করলেন। দোকানদার কাকা একটু বেশি খুশি মন হলো আমাদের পেয়ে। পরে কথায় কথায় বললেন তার মেয়েকে নারায়ণগঞ্জ এর বন্দর উপজেলায় বিয়ে দিয়েছেন। পরে কিছু টা বুঝতে পারলাম তার খুশি হওয়ার কারণ। যদিও বরিশাল স্থানীয় গ্রাম্য মানুষ গুলো বেশ ভালো’
এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় জেলায় ভ্রমণ করা সাইক্লিস্ট রাসেল বলেন, সাইকেল একটি পরিবেশ বান্ধব বাহন। সাইক্লিং করার মূল উদ্দেশ্য হলো শারীরিক সুস্থতা এবং বিনোদন। তবে আমরা সাইক্লিস্টরা সাইক্লিংকে নিয়ে গিয়েছি দেশ ভ্রমণ এর অন্যতম বাহনে। কারণ ভ্রমণে গতি যত কম সৌন্দর্য তত উপভোগ্য।
এছাড়াও আক্ষেপের সুর তুলে তিনি আরো জানান যে, ‘আমাদের দেশে সাইক্লিং করাকে এখনো ভালো চোখে দেখন না মানুষজন। আর শহরগুলো যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে সাইক্লিস্টদের নানা অসুবিধা এবং কখনো কখনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই সকল সাইক্লিস্টদের উচিত সাইক্লিং করার সময় যথাযথ নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করা এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করা।’
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সাইক্লিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে তা বিভিন্ন সময় সাইক্লিস্টদের জেলায় জেলায় ভ্রমণ করা দেখলেই বোঝা যায়। তবে আমাদের দেশ এখনো সাইকেল বান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। তাই দূষণরোধী এই বাহনটির জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সাইক্লিং করার মতো পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন সাইক্লিস্টগণ।
– লোকনাথ মন্ডল





