১৯৩০ সালে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লাইড টমবাউ প্লুটো আবিষ্কার করেন। সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী এই বস্তুটি তৎকালীন সময়ে সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। তবে প্রায় ৭৬ বছর পর, ২০০৬ সালে, প্লুটো তার ‘গ্রহ’ খেতাব হারিয়ে ফেলে, যা বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলে। প্লুটো একটি ছোট, বরফে ঢাকা গোলাকৃতি বস্তু। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৫৯০ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর ব্যাস প্রায় ২,৩৭৪ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর চাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ। প্লুটোর নিজস্ব বেশ কয়েকটি উপগ্রহ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম চ্যারন। এতদূর অবস্থান এবং ছোট আকারের কারণে প্লুটো বরাবরই বিজ্ঞানীদের কাছে এক রহস্যময় বস্তুর মর্যাদা পেয়েছে। ২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) গ্রহের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি বস্তুকে ‘গ্রহ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। যথা: সেটি সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে হবে, এর পর্যাপ্ত ভর থাকতে হবে যাতে নিজের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা এটি গোলাকৃতি হতে পারে, তার কক্ষপথটি আশেপাশের অন্য বস্তু থেকে পরিষ্কার এবং স্বতন্ত্র হতে হবে। প্লুটো প্রথম দুটি শর্ত পূরণ করলেও তৃতীয় শর্তে ব্যর্থ হয়। এর কক্ষপথ নেপচুনের কক্ষপথের সঙ্গে আংশিকভাবে অতিক্রম করে। অর্থাৎ কখনও কখনও এটি নেপচুনের চেয়েও সূর্যের কাছাকাছি চলে আসে। যেহেতু এর ভর নেপচুনের তুলনায় অনেক কম, তাই প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে আর গণ্য করা হয় না। ফলে, IAU একে ‘বামন গ্রহ’ বা ‘ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট’ হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে। প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা হারানো অনেকের জন্য আবেগঘন মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। অনেক বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ এর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে এবং প্লুটোর পুনঃগ্রহ স্বীকৃতির দাবিও জানায়। তবে IAU’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্লুটোকে আবার গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও, প্লুটো সৌরজগতের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ২০১৫ সালে নাসার নিউ হরাইজনস (New Horizons) মহাকাশযান প্লুটোর কাছ দিয়ে উড়ে গিয়ে এটির বিশদ ছবি ও তথ্য পৃথিবীতে পাঠায়। এর মাধ্যমে প্লুটোর ভূতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য, হিমবাহ, পর্বতশ্রেণি এবং পাতলা আবহমণ্ডল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য আমাদের কাইপার বেল্ট এবং সৌরজগতের গঠন ও বিকাশ বোঝার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অতএব, গ্রহের স্বীকৃতি হারালেও, প্লুটোর গঠন, গতি এবং উপগ্রহ ব্যবস্থা আজও বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে রয়েছে। এটি আমাদের সৌরজগতের এক অনন্য ও রহস্যময় অংশ হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: নাসা
– ইমরুল কায়েস





