সাম্প্রতিক খবর

শিল্প শহর নারায়ণগঞ্জ এখন জ্যামের শহর

যানজট, যে প্রতিনিয়ত আমাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা গিলে খাচ্ছে। বড় শহর ঢাকার মতো দেশের অন্যতম ব্যস্ত নগরী নারায়ণগঞ্জেও এখন যানজট গলার কাঁটার মতোই বিধছে শহরের বাসিন্দাদের জীবনে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট সমস্যা তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, বাসা থেকে বের হওয়া মানেই যানজটের ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হওয়া। এতে সাধারণ মানুষ অনেক ভোগান্তিতে পড়ছে।
ছোট্ট শহর হলেও দেশের অর্থ, শিল্প শ্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শহর নারায়ণগঞ্জ। এই শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে এর লাইফলাইন শীতলক্ষ্যা নদী এবং এই নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে ওঠেছে শতশত শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই সড়ক পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি শ্রমিকদের অবাধে গন্তব্য আসা যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে অফিস আদালতের মতো বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই শহরের প্রাণকেন্দ্রই অবস্থিত। অথচ সেই শহরকে এখন গিলে খাচ্ছে অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় যানজটের করালগ্রাস।
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট সমস্যার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। রাস্তার ফুটপাতে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচলের জায়গা সীমিত হচ্ছে ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে অধিক পরিমাণে। তাছাড়া গাড়ি চালকদের অজ্ঞতা ,রিক্সা আধিক্য, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকের উদাসীনতা, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, জেব্রা ক্রসিং ও ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা ,পর্যাপ্ত পার্কিং এর ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি কারণে শহরে প্রতিনিয়ত যানজট সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
পুরাতন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়ক, নতুন ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক এবং চাষাড়া-চিটাগাংরোড সড়ক সবগুলো একসাথে এসে মিশেছে চাষাড়া গোল চত্বরে। যেটা এই শহরের প্রাণকেন্দ্র।
বঙ্গবন্ধু সড়কের উপর দিয়ে নিতাইগঞ্জ এবং বন্দর ঘাট পাড় হয়ে মানুষ চাষাড়া মোড় পাড় হয়ে যায় নিজ গন্তব্যে। এই পথ ব্যবহার করে মানুষ ঢাকামুখী হয় এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করে। একই কথা চিটাগং রোড- চাষাড়া সড়কও। আর এই দুই সড়কের অচল অবস্থায় মানুষ ঢাকামুখী হতে ০৫/১০ মিনিটের পথ যানবাহনে চেপে ৪৫-৬০ মিনিট বা এরচেয়ে আরো বেশি সময়।
তীব্র যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্স ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সময়মতো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারছে না ফলে অনেক সময় অসুস্থ ও বিপদাপন্ন অনেক মানুষের জীবনে নেমে আসে মারাত্মক বিপর্যয়। যানজটের ফলে রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়, যার জন্য কর্মস্থলে সঠিক সময় পৌঁছানো যায় না, নষ্ট হয় শত শত কর্মঘন্টা ,ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা যা আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ।।
স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ সহ দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করলেও ফুটপাতের যথাযথ ব্যবহার, উল্টোদিকে গাড়ি প্রবেশ, অটোরিকশার দাপট, যত্রতত্র কার পার্কিং, সবকিছু মিলিয়ে দায়িত্বশীলদের হিমশিম খেতে হয় এই ছোট্ট শহরর যানজট নিরসনে।
এই তীব্র যানজট সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এ সমস্যার ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে ধীরে ধীরে বিপর্যয় নেমে আসছে। সড়ক পথের শৃঙ্খলা রক্ষা করা গেলে যানজট সমস্যা অধিকাংশ সমাধান করা সম্ভব। এর জন্য সরকারকে কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না তাই যানজট সমস্যা সমাধানে সরকারের সাথে সাথে আমাদের জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ট্রাফিক আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তার পাশাপাশি যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। তাহলেই শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জ ভয়াবহ তীব্র যানজট থেকে মুক্তি পেতে পারে।

– তনুশ্রী দেবনাথ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি।