প্রতিবছর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও পালিত হয় ইংরেজি নববর্ষ।এ ইংরেজি নববর্ষের রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।আমরা যে ইংরেজি সন বা খ্রিস্টাব্দ বলি এটা আসলে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার।চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার হিসাব করে মাস এবং তারপর বছরের হিসাব করতে শুরু করে আমাদের পৃথিবীবাসীরা।
জানা যায়, প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর হিসাব করতে শিখেছিলো। যার নাম তারা রেখেছিল- সৌরবর্ষ। কিন্তু সমস্যা হলো সূর্য দেখে হিসাব আর চন্দ্র দেখে হিসাবের অনেক পার্থক্য থাকতো। কিন্তু বছর গুনলে কী হবে তার হিসাব রাখা জরুরি। তাই প্রয়োজনীয়তা থেকেই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করলো। যাকে আমরা ক্যালেন্ডার বলি। এরপর গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা।
রোমান বর্ষপঞ্জিকায় ১২ মাসে বছর হিসাব হতো না। তাদের বছরে ছিল শুধু ১০ মাস। সে হিসেবে, রোমানরা বছর হিসাব করতো তিনশো চার দিন। তারা মার্চের ১ তারিখে নববর্ষ উৎযাপনের রীতি চালু করে। পরবর্তীতে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দুটিকে ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ‘মারসিডানাস’ নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১লা জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে।
১৫৩ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম রোমানরা ১লা জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল। বিশেষভাবে ১লা জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের, সম্রাট জুলিয়াস এসে যেটার প্রচলন করেছিলেন সেটা হলো সৌরবর্ষের।
রোমানদের দরজা ও ফটকের দেবতা ছিলেন জানুস। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘জানুয়ারি’ মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস। সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় ‘জুলাই’। আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় ‘অগাস্ট’।
যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের প্রচলন।
১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ঐ সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারে ১লা জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।এ গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারই আমাদের দেশে ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।
– চৈতি দাস অদিতি, দুরন্ত প্রতিনিধি
